Garo Jum Chas
কৃষি কাজ গারোদের প্রধান পেশা। যারা গভীর পার্বত্য এলাকায় বসবাস করে তাদের প্রধান পেশা জুম চাষ, কিন্তু যারা সমভূমিতে বসবাস করে তারা সমভূমির অন্যান্য অধিবাসীদের মতোই হালচাষ করে জীবিকা-নির্বাহ করে। জুম চাষ গারোদের প্রাচীন চাষ পদ্ধতি। এটা শুধু গারোদেরই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন আদিবাসী এবং পার্বত্য জনগোষ্ঠীর প্রাচীন চাষ পদ্ধতি। নৃবিজ্ঞানীদের মতে নব্য প্রস্তর যুগের শুরুতে আদিম মানবসমাজে জুম চাষের প্রচলন শুরু হয় এবং ওই সময়ই তা মোটামুটিভাবে বর্তমানের রূপ লাভ করে। ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও জুম চাষের ব্যাপক প্রচলন ছিল। সুইডেনের মতো উন্নত দেশেও কোনো কোনো এলাকায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্তও জুম চাষের প্রচলন ছিল। গারো পাহাড়ের পার্বত্য এলাকায় জুম চাষ এক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। গভীর বন কেটে বড় বড় গাছপালা পুড়িয়ে চাষোপযোগী করে তোলা হয়। প্রতি দুই বছর অন্তর নতুন নতুন জায়গা এমনি করে জুম চাষের জন্য নির্বাচন করা হয়। কারণ এসব পার্বত্য অনুর্বর জমিতে একাধারে দুই বছরের বেশি ফসল ফলানো যায় না।
গারো পাহাড়ে এ রকম জুম চাষোপযোগী পার্বত্য এলাকাকে আখিং বলা হয় এবং এ রকম আখিং গারো পাহাড়ে সংখ্যায় কয়েকশর মতো হবে। একেকটা আখিং একেক জন আখিং নক্সার অধীনে থাকে। এই নক্মা সব দিক দিয়ে বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। বাংলা ভাষায় নক্মা শব্দের আক্ষরিক অর্থ ধনী। তার গ্রামের অধিবাসীদের পরিবার পিছু সমভাবে জুম চাষের জমি ভাগ করে দেওয়া আখিং নক্মার দায়িত্ব। জুম চাষের জমি ভাগ করার সময় তার নিজের জন্য এবং তার পরিবারের অন্যদের জন্যও তিনি কিছু অংশ রেখে দেন। জমি ভালো হয়ে গেলে তার প্রত্যেক পরিবার নিজ নিজ ভাগের জমি পরিষ্কার করা আরম্ভ করে দেয়। জংলি বাঁশ এবং বড় বড় গাছপালায় আবৃত এসব জমি পরিষ্কার করা এক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ডিসেম্বর মাস হতে কাজ শুরু করে মার্চ মাস নাগাদ সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে ফেলা হয়। এ সময় গাছের ডালপালা পুড়িয়ে একদিকে যেমন তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা সম্ভব হয় তেমনি পোড়া ছাই এবং আবর্জনাদি দ্বারা জমিতে উত্তম সার দেওয়া হয়ে যায়। এসব জুম ক্ষেতে দুই বছরের বেশি ফসল ফলানো যায় না। দুই বছর আবাদের পরই অন্যত্র নতুন জায়গা নির্বাচন করতে হয় এবং পুরনো জুম ক্ষেতটি অনেক বছরের জন্য অনাবাদী ফেলে রাখা হয়। অনেক বছর পর সেখানে নানাবিধ লতাগুল্ম এবং গাছপালা জন্মে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পেলে পরে সেখানে পুনরায় জুম চাষ করা হয়।
No comments